
ভারতীয় গরু নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা


* চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পশু উৎপাদন করা হয়েছে
* সীমান্তে পশু প্রবেশ ঠেকাতে জিরো টলারেন্স বিজিবি
* পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ সতর্ক থাকবে
স্টাফ রিপোর্টার
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি পশু উৎপাদন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পশু ঢাকায় সরবরাহ করা যাবে। তবে দেশের বিভিন্ন জেলার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে পশু প্রবেশের আশঙ্কা করছেন খামারি ও গৃহস্থরা। এতে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তারা বলছেন, কোরবানির হাট শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগ থেকে সীমান্ত দিয়ে পশু অনুপ্রবেশ করায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। যার কারণে বাধ্য হয়ে খামারিদের কমদামে গরু বিক্রি করতে হয়।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের দাবি, এবার দেশের কোনো সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পশু চোরাইভাবে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য প্রত্যেক সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা। বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি।
সূত্রমতে, কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় এ বছর কোরবানির জন্য দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৫২টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৮২টি গরু, ৬০৮টি মহিষ, ৫৬ হাজার ৯৪০টি ছাগল, ১১ হাজার ৮০৫টি ভেড়া ও অন্যান্য পশু ৩১৭টি। জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬টি পশু। সেই হিসাবে এ বছর কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এসব পশু পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে সরবরাহ করা যাবে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দ গ্রামের রামিশা ক্যাটেল ফার্মের পরিচালক সবুর আহমেদ বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এবার বেশ কয়েকটি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। বেশিরভাগ গরুই বড় আকৃতির। ফার্মে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে গরু না এলে এবার খামারিরা লাভবান হবেন। কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি এলাকার নূরজাহান এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলেন, খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৫৮টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি কোরবানির জন্য বিক্রি হয়েছে। আমার খামারে ৮ লাখ টাকা দামের একটি গরু রয়েছে। এর ওজন হবে প্রায় ১ টন। খাদ্যের দাম সহনীয় থাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মাসকরা এলাকার আবদুর রশিদ বলেন, গত বছর কুমিল্লার বাজারে ভারতীয় গরু আসার কারণে ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। এবার ঘরোয়াভাবে কয়েকটি গরু লালন-পালন করেছি। শুনেছি বিজিবি সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এভাবে থাকলে দেশি গরুর কদর বাড়বে এবং আমরাও ন্যায্যমূল্য পাবো।
কুমিল্লা নগরীর চর্থ এলাকার খামারি মারুফ বলেন, লাভের আশায় আমরা একটি বছর গরু-ছাগল পালন করে থাকি। চোখের সামনেই সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরু দেখে। আমরা চাই ভারতীয় পশু যেন কুমিল্লায় প্রবেশ করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে প্রশাসন তৎপর হোক। এতে করে দেশের টাকা দেশেই থাকবে, লাভবান হবে খামারিরা।
কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার খামারি রয়েছেন। তাদের খামারের পশুসহ জেলায় কোরবানির চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ২৩ হাজার ১৬৬টি পশু রয়েছে। ফলে উদ্বৃত্ত এসব পশু জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায়ও বিক্রি করা যাবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি এবার কুমিল্লায় কোরবানির পশুর সংকট হবে না।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অবৈধ পথে ভারত থেকে যাতে দেশে পশু আসতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছি। এছাড়াও পশুবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও হয়রানি যাতে না হয় সেদিকেও বিশেষ নজর দেয়া হবে।
কুমিল্লা ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন ভারতীয় গরু আসছে না বললেই চলে। তার কারণ বেশিরভাগ সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়া আছে। এরপরও শাহপুর ও শিবের বাজার সীমান্ত এই দুইটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই এলাকায় বিজিবি সদস্যরা নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এবার অন্তত চোরাই পথে কুমিল্লার অংশে ভারতীয় পশু প্রবেশ করতে না পারবে না, সেজন্য আমরা জিরো টলারেন্সে আছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ